প্রাচীনকাল থেকে রংপুর সদর উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় , লাঠি খেলা , হাডুডু, কানামাছি, বৌছি, ছিবুড়ি, কানামাছি, সার্কাস, মেলা, ফুটবল, ইত্যাদি খেলা বেশ প্রচলিত ছিল। এখনো কম বেশী এ খেলাগুলো প্রচলিত আছে। বর্তমানে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলাজনপ্রিয়তা লাভ করেছে। স্কুল ফুটবল, আন্তঃইউনিয়ন ফুটবল এবং উপজেলা ক্রিকেটলীগ নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ফুটবলে রংপুর সদর উপজেলার সাফল্য ২০১১
খেলাধুলা সুস্থ দেহ মনের জন্য অপরিহার্য। বর্তমান সরকারশিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশ ত্বারান্বিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে শিশুবান্ধব ও আনন্দমুখর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২য় বারের মতো বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১১ এবং ১ম বারের মতো বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১১ এর আয়োজনের ঘোষনা দিলে সাড়া দেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে শুরম্ন হয় বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ফুটবল টুর্নামেন্ট। উক্ত ফুটবল টুর্নামেন্ট দুইটিতে প্রায় ৬১০০ হাজার করে বিদ্যালয় অংশগ্রহন করে। রংপুর সদর উপজেলার দুটি দল ১নং পালিচড়া সপ্রাবি ও হরিদেবপুর সপ্রাবি ইউনিয়ন পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উপজেলা পর্যায়ে খেলতে আসে। এতে দুই বিদ্যালয়ের এস.এম.সি ও শিক্ষকগনের অবদান অনস্বীকার্য। উপজেলা পর্যায়ে বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টে চন্দনপাট ইউনিয়নের শাহাবাজপুর রেজিঃ প্রাঃ বিদ্যালয়কে ২-০ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়। পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক জনাব বি এম এনামুল হক। তিনি সদর উপজেলা কে জাতীয় পর্যায়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখান। সেই স্বপ্ন বাসত্মবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোসত্মাইন বিলস্নাহ্ স্যারের নেতৃত্বে দুই দলের খেলোয়াড়দের জন্য শুরম্ন হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। দুই জন কোচ কে নিয়োগ দেয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গণ প্রশিক্ষণক্যাম্পের তদারকি করেন। প্রশিক্ষণ চলা কালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রায় প্রতিদিনই দুই দলের প্রশিক্ষণদেখেন তাদের উৎসাহদেন, তাদের সমস্যা গুলো শুনেন এবং কী ভাবে আরোও ভালো খেলাযায় তার পরামর্শদেন। উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তারাও সুযোগপেলে প্রশিক্ষণক্যাম্পে গিয়ে শিশুদের উৎসাহদিয়ে আসতেন। শুরম্ন হলো জেলা পর্যায়ের খেলা এতে মেয়েদের দল কাউনিয়া উপজেলা কে ৫-০ গোলে, সেমিফাইনালে পীরগঞ্জ উপজেলা কে ট্রাইব্রেকারে ৪-২ গোলে এবং ফাইনালে পীরগাছা উপজেলাকে ২-০ গোলে পরাজিত করে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হন। ছেলেদের খেলায় কাউনিয়া উপজেলা কে ১-০ গোলে, সেমিফাইনালে বদরগঞ্জ উপজেলাকে ২-০ গোলে এবং ফাইনালে গংগাচড়া ইউনিয়নকে ২-১ গোলে পরাজিত করে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হন। দুই দলের প্রতিটি খেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোসত্মাইন বিলস্নাহ্ মাঠে উপস্থিত থেকে শিশুদের উৎসাহিত করেন। এবং খেলাশুরম্নর আগে এবং বিরতির সময় ভালখেলতে উৎসাহিত করেন। জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাদের প্রশিক্ষণক্যাম্প বিদ্যালয় হতে উপজেলা পরিষদে নিয়ে আসা হয়। সেখানে শিশুদের নিবীর প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষনে উপজেলার সকল অফিসার মাঠে উপস্থিত থেকে শিশুদেরকে উৎসাহ ও ভালখেলার নানা পরামর্শদেন। বিভাগীয় পর্যায়ের খেলায় মেয়েদের দল কুড়িগ্রামকে ১-০ গোলে, সেমিফাইনালে পঞ্চগড়কে ২-০ গোলে এবং ফাইনালে গাইবান্ধা জেলাকে ২-১ গোলে পরাজিত করে বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। তেমনি ভাবে ছেলেদের দলও কুড়িগ্রামকে ১-০ গোলে, সেমিফাইনালে দিনাজপুরকে ২-১ গোলে এবং ফাইনালে নীলফামারীকে ২-১ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়। একই উপজেলার দুই দল জাতীয় পর্যায়ে খেলার যোগ্যাতা অর্জন করেছে এটি খুবেই বিরল ঘটনা। এতে এস.এম.সি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ সকলেই নিরলস ভাবে কাজ করে গেছে। শিশুদের যখন যেটা প্রয়োজন সেটা মিটিয়েছেন। বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হলে জেলা প্রশাসক মহোদয় দুই দলকেই তার অফিসে ডেকেনিয়ে মিষ্টিমুখ করান। জেলা প্রশাসক স্যারের কথায় উদ্বদ্ধ হয়ে ভালো খেলার প্রতিশ্রম্নতিদেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কেটস, ট্র্যাকসূট, জার্সী ইত্যাদি উপহার দেয়া হয়। শুরম্ন হলো জাতীয় পর্যায়ের ক্যাম্পিং। ক্যাম্পিং চলাকালে খবর এল জাতীয় পর্যায়ের খেলা আগামী ২৬ জানুয়ারী ২০১২ হতে শুরম্ন। রিপোর্ট করতে হবে ২৪ জানুয়ারী । ২৪ জানুয়ারী সকাল ৮.০০ ঘটিকায় দুইদলকে বিদায় জানান বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা, উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা বৃন্দ। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলার স্বপ্ন নিয়ে দু’দল একই বাসে সকাল ৯.০০ ঘটিকায় যাত্রা শুরম্ন করল।
জাতীয় পর্যায়ের ১ম খেলায় ২৬ জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। খেলা দেখতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব মোসত্মাফিজার রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোসত্মাইন বিলস্নাহ, ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্য, এস.এম.সি সভাপতি জনাব আবেদ আলী সহ সকল সদস্য মাঠে উপস্থিত থেকে উৎসাহদিতে থাকেন। মেয়েদের দল ২-১ গোলে স্বাগতিক ঢাকা বিভাগকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে ওঠে। দলে রম্নখসানা ২টি গোল করেন এবং তার খেলা দেখে সবাই তাকে মেসী বলে ডাকতে থাকে। মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন মহোদয় ৩০০০/- টাকা মিষ্টি খেতে দেন।
ছেলেদের খেলায় রাজশাহী দলের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হলেও মাঠের সকল দর্শকের কাছে ভাল খেলার প্রশংসা পায়। যদিও টুর্নামেন্টটি ছিল অনুর্ধ ১২ বছরের কিন্তু শারীরিক গঠনদেখে মাঠে উপস্থিত নিরপেক্ষ কোন দর্শকেই রাজশাহী দলের খেলোয়াড়দের বয়স ১২ বছরের মধ্যে মনে করেন নাই। পরবর্তীতে রাজশাহী দল যখন পুরস্কার নিতে যান তখন এটিএন বাংলার প্রতিনিধি বলেছিলেন ‘‘আগামীতে বয়সের ব্যাপারটি যেন কর্তৃপক্ষ গুরম্নত্ব সহকারে দেখেন’’
বয়সের কাছে হারমেনে ছেলেদের যাত্রা থেমে গেলেও মেয়েদের যাত্রা চলতেই থাকে। ২৯ জানুয়ারী ২০১২ মেয়েদের স্বপ্ন পূরনের দিন। আজ তারা ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলবে। খেলার আগের দিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার , জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, রংপুর জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত উপপরিচালক ড. জয়নুল আবেদীন ছাড়াও আরও অনেকে দলের সাথে দেখা করে দলকে উৎসাহ দিতে থাকেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সার্বক্ষনিক দলের সাথে ছিলেন। সেমিফাইনালে তারা সিলেট জেলা দলকে ১-০ গোলে পরাজিত করে প্রথম বারের মতো ফাইনালে ওঠে। খেলায় সিলেট জেলা দল রংপুরের মেয়েদের কাছে পাত্তাই পায় নাই। খেলায় রোখসানা প্রতিপক্ষক্ষর ৫ জন খেলোয়াড় কে ডজ দিয়ে সুন্দর একটি গোলকরেন যা দেখে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আ স স ম আরেফীন সিদ্দিক স্যার তাকে ম্যারাডোনার সাথে তুলনা করেন।
ফাইনাল খেলার আগের দিন সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্রীড়া পলস্নীতে মেয়েদের সাথে দেখা করেন। তিনি মেয়েদেরকে মিষ্টি খাওয়ান তাদের খোজ খবর নেন তারা যেন ফাইনালে সুন্দর ফুটবল উপহার দেন এই পত্যাশা করেন। রংপুরের দলও তাকে ফাইনাল খেলা দেখার জন্য বঙ্গবন্ধু মাঠে আমন্ত্রন জানান এবং ভাল খেলার কথা বলেন।
ফাইনাল খেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম পরিপূর্ন। সুন্দর করে মাঠ সাজানো। ফাইনাল খেলা দেখার জন্য মাঠে উপস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. আফসারম্নল আমীন ও মাননীয় প্রতি মন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, বিভাগীয় কমিশনার রংপুর বিভাগ, জেলা প্রশাসক রংপুর, খেলাটি এটিএন বাংলায় সরাসরি প্রচার করে এতে বাংলাদেশ ও বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল প্রেমি মানুষ খেলাটি উপভোগ করেন। মাঠে রংপুর খুব ভালো খেলা প্রদর্শন করলেও গোলবার বাঁধা হয়ে দ্বারায়। তিনটি শর্ট গোলবারে লেগে ফিরে আসে। একটি ন্যায্য গোল বাতিল হয়ে যায়। খেলায় যদিও রংপুরের মেয়েরা ২-০ গোলে পরাজিত তবু দেশ বিদেশের অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে দলকে অভিনন্দনের বার্তা পাঠাতে থাকে সুন্দর ফুটবল খেলার জন্য। তারা বলে রংপুর দলই চ্যাম্পিয়ন কারন রংপুর বিভাগই এক মাত্র দল যারা খেলোয়াড়দের বয়সের ক্ষক্ষত্রে স্বচ্ছ ছিল।
রংপুরের রোখছানা বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার হিসেবে গোল্ডেন বুট পান সেই সাথে সে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসাবেও পুরস্কার পান। রংপুর অসাধারন খেলেছে ওরাই সত্যিকারের বিজয়ী। হাতে ট্রফি ওঠেনি রোল অব অনারে নাম খোদাই করা থাকবে না কিন্তু এই প্রাপ্তি গুলোই বা কম কী! কোটি কোটি ফুটবল প্রেমীর মন জয় করতে পেরেছে যে দল তারা তো একদিকে বিজয়ীই।
ফাইনালে হারলেও মানুষের হৃদয়ে তো ঠিকই জয় করতে পেরেছিলেন রংপুর এর ক্ষুদে ফুটবলেরা। রংপুর জেলার ফুটবল ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় ১৯৭৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হেরে রানার্সচাপ হয়েছিল। এর পর জাতীয় পর্যায়ে রংপুর জেলার এটাই সর্বোচ্চ সাফল্য।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS